ওমরার পরিচয়ঃ
ওমরাহ্ আরবি শব্দ । এর আভিধানিক অর্থ হলো, জিয়ারত বা সাক্ষাত করা। পরিভাষায় ওমরা বলা হয়, নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে বাইতুল্লাহ শরিফের জিয়ারত করা। আল ফিকহুল হানাফি ফি ছাওয়াবিহিল জাদিদ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭২।
ওমরা করার উদ্দেশ্যঃ
সমস্ত মুসলমানদের জন্য ওমরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য বহন করে। এটি মুলত বিশুদ্ধতার একটি আধ্যাত্মিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয় যা প্রাথমিকভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির এবং অনুগ্রহ অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। যদিও এটি কোন মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক নয় (হজের বিপরীতে), এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওার একটি সহজ উপায়।
তাছাড়া, ওমরাহ্ হল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের একটি অভ্যাস। আমরা অনেকেই সুন্নাহকে খুব বেশি গুরুত্ব দেইনা, কিন্তু আপনি যদি কুরআনের আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহের কোন অনুশীলন থেকে বাদ পড়ার মত অনুভব করবেন না। আয়াত-৩১, সুরাহ আল ইমরান, হে নবি বলুন, আপনি যদি সত্যি আল্লাহকে ভালবাসেন, তবে আমাকে অনুস্মরণ করেন, আল্লাহ আপনাকে ভালবাসবেন এবং আপনার পাপকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম করুনাময়।“
উপরের কুরানের আয়াতের উপর ভিত্তি করে আপনি যখন ওমরাহ করবেন, তখন আপনি প্রকৃতপক্ষে আলাহর ভালবাসার যোগ্য হয়ে উঠবেন।
উমরার হুকুম:
যার সামর্থ্য আছে তার জন্য জীবনে কমপক্ষে একবার উমরা করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। অনেকে উমরাকে ওয়াজিবও বলেছেন। (মানাসিক পৃ.-৪৬৩)
উমরার সময়:
উমরার জন্য কোনো নির্ধারিত সময় নেই। উমরার জন্য উত্তম সময় হলো রমযান মাস। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রমযান মাসে উমরা করলে একটি হজ্জের সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যায়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রমযান মাসে উমরা করলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জ করার মত ছাওয়াব পাওয়া যায়।
(বুখারী হা. নং-১৭৮২, সহীহ মুসলিম হা.নং১২৫৬)
ওমরাহ্ হজ পালনের মুল কাজ চার টি।
ফরয দুইটি: ১. ইহরাম বাঁধা ২. তাওয়াফ করা।
ওয়াজিবও দুইটি: ১. সা’ঈ করা ২. মাথা মুন্ডানো বা সমস্ত চুল ছোট করা।
১. ইহরাম বাঁধাঃ
ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে করনীয়ঃ
ইহরামের কাপর পরিধানের পূর্বে শরীরের গুপ্ত লোমগুলো পরিষ্কার করা, নখ কাটা, গোসল করা এবং পুরুষদের (মহিলাদের জন্য নয়) শরীরে আতর লাগান সুন্নাত। তবে ইহরামের কাপড় পরিধানের পর শরীরে বা ইহরামের কাপড়ে আতর লাগান যাবেনা।
#পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড়ঃ
পুরুষরা ইহরামের কাপড় সেলাই বিহিন দুই টুকরা কাপড় পরবেন। একটি শরীরের নিচের অংশে লুঙ্গির মত করে ( ছোট টুকরাটি) এবং অন্যটি গায়ে চাদরের মত করে (বড় টুকরাটি)। মাথায় টুপি পড়া যাবেনা বা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা যাবেনা, পুরুষরা পায়ের পিছনের গোড়ালির অংশ ঢাকা থাকে এরকম কোন স্যান্ডাল পরতে পারবেন না।
#মহিলাদের জন্য ইহরামের কাপড়ঃ
মহিলারা ইহরামের জন্য সেলাই যুক্ত যে কোন পোশাক পরিধান করতে পারবেন কিন্তু মহিলারা ইহরামের হালতে নেকাব এবং হাতমোজা পড়তে পারবেন না, তবে পর পুরুষরা যাতে চেহারা দেখতে না পায় সেজন্য বড় ওড়না বা এই জাতীয় কোন কাপড় দিয়ে নিজের চেহারা ঢেকে রাখবেন।
#ইহরামের কাপড় কোথায় পড়বেনঃ
যেহেতু মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো ইহরামের পোশাক নাই তাই তারা পছন্দসই পোশাকটি বাড়ি থেকেই পড়ে বের হবেন আর পুরুষরা মিকাতের পূর্বে যে কোন জায়গায় ইহরামের কাপড় পরতে পারবেন।
মক্কার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে সরাসরি জেদ্দা ভ্রমণ করলে (সৌদি এয়ারলাইন্স এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) বাড়ি থেকে বা এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন শেষ করার পর ফ্লাইটে ওঠার আগে নামাজের রুমে গিয়ে ইহরামের কাপড় পরতে পারেন ।
যদি ট্রানজিট ফ্লাইটে ভ্রমণ করেন (এমিরেটস, কুয়েত, কাতার, সালাম, ওমান এয়ারলাইন্স ইত্যাদি) তবে ট্রানজিট এয়ারপোর্টের প্রেয়ার রুম বা নামাজের স্থান থেকে ইহরামের কাপড় পরিধান করতে পারেন
সৌদি এয়ারলাইন্স এর কিছু ফ্লাইট ছাড়া অন্য ফ্লাইটে সাধারণত নামাজের জন্য ফ্লাইট এর ভিতরে আলাদা কোন জায়গা থাকে না তাই ফ্লাইট এর ভেতর ইহরামের কাপড় করা কষ্টসাধ্য বলা যায়।
যারা প্রথমে মদিনা যাবেন এবং পরে গাড়ীতে বা ট্রেনে বা ফ্লাইটে মক্কায় এসে ওমরা করবেন তারা মদিনার হোটেল বা বাসায় থেকে ইহরামের কাপড় পরিধান করে নিতে পারবেন, তবে গাড়িতে করে মক্কায় ভ্রমণ করলে পথিমধ্যে মিকাতে গোসল করে এই ইহরামের কাপড় পড়া উত্তম, মিকাতে গোসল করা মোস্তাহাব। মিকাতে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক গোসলের খুব সুন্দর ব্যবস্থা আছে ।
#মিকাতঃ
মিকাত বলতে কোন স্থানের সীমানাকে বোঝানো হয় অর্থাৎ যে স্থান থেকে ওমরা করার নিয়ত করতে হয় বা ইহরাম বাধতে হয় সেটিই মিকাত।মনে রাখবেন। ইহরাম বাধা মানে ইহরামের কাপড় পরা নয়। মিকাত থেকে ওমরাহ্ এর নিয়ত করার পর থেকেই ইহরাম বাঁধা হয়। যে কোন দেশ থেকে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে যেতে গেলে যখন ফ্লাইট থেকে ঘোষনা দেয়া হবে যে, ‘‘কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মীকাত অতিক্রম করবো’’ ঠিক সেই সময় টি অনুমান করে আকাশে ফ্লাইটে অবস্থানকালে ওমরাহ এর নিয়ত করতে হবে ।
ফ্লাইট অবতরণ করা আনুমানিক ৫০ মিনিট পূর্বে এই ঘোষনা দেয়া হয় এবং অবতরন করার আনুমানিক ৩০ মিনিট পূর্বে ফ্লাইটটি মীকাত অতিক্রম করে। আর কেউ যদি মদিনা যেতে চান এবং মদীনা থেকে গাড়িতে বা ট্রেনে মক্কায় গিয়ে ওমরা করতে চান- গাড়িতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আনুমানিক 20 মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করার পর যুলহুলাইফা বা বীরে আলি মিকাত পাওয়া যাবে এবং সেখান থেকেই ওমরা নিয়ত করতে হবে। কিন্তু ট্রেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনটি বীরে আলি মিকাত হয়ে মক্কায় যায় না এবং মিকাত নির্দেশক কোন ঘোষণা বা নির্দেশনা সাধারনত দেয়না, তাই মদিনা থেকে ট্রেন ছাড়ার পর ৫/১০ মিনিট পরেই ওমরাহ এর নিয়ত করে নিবেন।
পুরুষদের ওমরাহ এর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয় (নিজের টা নিজে শোনা যায় এমন আওয়াজে) কিন্তু মহিলারা মনে মনে নিয়ত করবেন।
নিয়তটি হলো, “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা ওমরা” অর্থঃ “আল্লাহ আমি ওমরাহ এর নিয়ত করছি”
উল্লেখ্য যে, কেউ যদি ওমরাহ নিয়ত না করে মীকাত অতিক্রম করে ফেলে তবে তাকে অবশ্যই আবার নিকটস্থ মিকাতে এসে ওমরা করে যেতে হবে আর যদি তা না করে তবে একটি দম দিতে হবে। আবার ইহরাম বাধার বা ওমরাহ্র নিয়ত করার পর কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে যেগুলোর কোনটা করলেও দম নিতে হবে, দম দেয়া হলো একটি ছাগল বা দুম্বা বা কুরবানি যোগ্য কোন পশু কোরবানি দেওয়া এবং সম্পূর্ণ গোস্ত মক্কায় মসজিদুল হারামে গরীবদের মাঝে বিতরন করে দেওয়া ওমরাহ্কারী নিজে একটু খেতে পারবেন না।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহঃ
ইহরাম বাধার পর থেকে ওমরাহ্ শেষ করা পর্যন্ত কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইহরামকালে নিষিদ্ধ কাজ গুলো হলো-
- শরীরের যে কোন অংশের চুল কিংবা পশম কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা।
- নখ কাটা
- ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
- স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গম অথবা যৌন উত্তেজনামুলক কোনো আচরন বা কথা বলা
- শিকার করা
- কোন জিব জন্তু হত্যা করা
- বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বা এই জাতীয় কোন ঘটকালী করা।
- পুরুষদের মাথায় টুপি পড়া বা কোন কিছুতেই মাথা ঢাকা।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে পায়ের পিছনে গোড়ালির অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা পড়া।
- হারাম এলাকার মধ্যে কোন গাছ কাটা পাতা ছেঁড়া বা উপড়ে ফেলা
- ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে সেলাইযুক্ত কোন পোশাক পরিধান করা।
তালবিয়াঃ
ওমরাহ্র নিয়ত করার পরেই বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করবেন। তালবিয়া দলগতভাবে পাঠ না করে এককভাবে পাঠ করতে হয় পুরুষরা একটু উঁচু আওয়াজে তালবিয়া পাঠ করবেন যেন একে অপরের শোনা যায়, কিন্তু মহিলারা মনে মনে পাঠ করবেন।
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাক”
অর্থঃ “আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির, আপনার কোন অংশীদার নাই, নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচছত্র
আধিপত্য আপনার, আপনার কোন অংশীদার নাই।
২. তাওয়াফঃ
তাওয়াফ যেভাবে তাওয়াফ করা শুরু করবেন
পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার আগে সম্ভব হলে আপনার হোটেল কিংবা বাসা থেকে গোসল করে নিবেন এটি একটি মুস্তাহাব কাজ। ডান পা দিয়ে মসজিদুল-হারামে প্রবেশ করবেন এবং মসজিদে ঢোকার দোয়া করবেন।
‘’বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আউজুবিল্লাহিল আজিম
ওয়া-বি-ওয়াজ হিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদিীমী মিনাশ শাইত্বনির রজীম, আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা।‘’
“আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ার গুলো খুলে দিন।“
এরপর মাতাফে পৌঁছালে (কাবাঘরের চারিদিকে খোলা তাওয়াফের স্থান) তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করবেন। এবার কাবাঘরের যে কর্নারে হাযরে আসওয়াদ আছে সেখানে গিয়ে পুরুষরা ডান কাধ খোলা রেখে শরীরের ওপরের অংশের ইহরামের কাপড়টি পড়বেন (যেটিকে ঈজতিবা বলে) এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ডান হাত হাজরে আসওয়াদ বরাবর ইশারা করে কাবাকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ করা শুরু করবেন। তাওয়াফের সাতটি চক্করের শুরুতেই এভাবে হাযরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে ডান হাত তুলে ইশারা করবেন (ইশারা করে হাতে চুমু খাওয়া যাবেনা) এবং ইশারা করার সময় বলবেন
বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, অথবা আল্লাহু আকবার।
যদিও হাযরে আসওয়াদ সম্মুখে এবার ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করার সুন্নত কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সাধারণভাবে এখন এটা সম্ভব হয়না যদি সম্ভব হয় তবে চুমু খেয়েই শুরু করবেন কিন্তু ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে অন্যকে কষ্ট দিয়ে করা যাবে না।
একটি তাওয়াফে মদ মোট সাতটি চক্কর দিতে হয় এবং প্রতিটি চক্কর হাজরত বরাবর কর্নার থেকে শুরু হয়ে আবার হাযরে আসওয়াদ বরাবর কর্নার এসে শেষ হয়।
পুরুষরা প্রথম তিন চক্কর ছোট ছোট পদক্ষেপে দৌড়ানোর ভান করে হাঁটবেন (যেটিকে রমল বলা হয়) এবং বাকি চারটি চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন আর মহিলারা ৭ টি চক্কর ই স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন।
তাওয়াফের প্রতিটি চক্করে হাজরে আসওয়াদের আগের যে কর্নার রয়েছে যেটিকে রুকনে ইয়ামানী কর্নার বলা হয় এই কর্নার হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন কারণ এই সময়ে স্পর্শ করার সুন্নত, যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তবে তাওয়াফ করা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন রুকনে ইয়ামানী কে চুমু খাওয়া যাবেনা।
এভাবে তাওয়াফের সাতটি চক্কর শেষ করে পুরুষদের গায়ের ইহরামের কাপড় দিয়ে ডান কাধটি আবৃত করে ফেলবেন অর্থাৎ চাদরের মতো করে পড়বেন।
উল্লেখ্য যে, তাওয়াফের সপ্তম চক্করটি শেষ করার পর হাত দিয়ে ইশারা করা বা হাতে চুমু খাওয়া যাবেনা এবং তাওয়াফ করার সময় কখনি হিজরে ইসমাইল বা হাতিমের ভেতর দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না, কারণ হিজরে ইসমাইল কাবার একটি অংশ আর কাবার ভিতরে তাওয়াফ করা যায় না।
#তাওয়াফের দোয়াঃ
তাওয়াফের সময় যেকোনো দোয়া করা যায়, তবে রুকনে ইয়ামানী কর্নার থেকে হাজরে আসওয়াদ কর্নার পর্যন্ত তাওয়াফ করার সময় একটি দোয়া আছে এই দোয়াটি পড়া সুন্নত,
দোয়া টি হলঃ
“রব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা ওয়াকিনা আজাবান্নার”
অর্থ হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও।
৩. সাঈঃ
সাঈ করার জন্য প্রথমে সাফা পাহাড়ের যেতে হয়, সাফা পাহাড়ে ওঠার সময় একটি দোয়া আছে, দোয়াটি হলঃ “ইন্নাস সাফা ও মারওয়াতা মিং শাআ’ইরিল্লাহ” অর্থঃ নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত”।
সাফা পাহাড়ে পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে মোনাজাতের ন্যায় দুই হাত তুলে নিচের দোয়াটি পড়বেন, যে দোয়াটি আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম করেছিলেন, শুরু করার আগে তিনবার আল্লাহু আকবার বলবেন এবং বলবেন—-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আঞ্জাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসর আব্দাহু ওয়াহা জামাল আহজাবা ওয়াহদাহু।“
অর্থঃ আল্লাহর ব্যতিত সত্য কোন মাবুদ নাই, তার কোন শরীক নাই, সকল রাজত্ব ও প্রশংসা তার জন্য, তিনি সমস্ত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নাই। যিনি স্বীয় ওয়াদা পূরণ করিয়, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন।
এই দোয়াটি করার পর নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন,এভাবে আবারও দ্বিতীয়বারের জন্য আরবিতে আগের দোয়াটি পড়বেন এবং এরপর নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন তৃতীয় বার দোয়াটি শুরু করার আগে এখন আর “আল্লাহু আকবর” বলতে হবে না।
আবারো তৃতীয়বারের জন্য আরবিতে আগের দোয়াটি পড়বেন এবং নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন এবার দোয়াটি শুরু করার আগে এার””।আর আল্লাহু আকবর বলতে হবেনা। উল্লেখ্য যে, এই দোয়াটি কিছু অংশ পড়লেও দোষের কিছু নেই তবে যেহেতু এটি দোয়া কবুলের জায়গা তাই এখানে নিজের মত বেশি বেশি দোয়া করবেন।
দোয়া শেষে সাঈ করতে হবে অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭ চক্কর দিতে হবে। সাফা পাহাড়ের দোয়া শেষ করে মারওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শুরু করবেন একটু হাঁটার পরেই দেখবেন কিছুটা জায়গা সবুজ লাইট দ্বারা চিহ্নিত করা আছে, এই সবুজ চিহ্নিত জায়গাটিতে পুরুষদের একটু দ্রুত দৌড়ানোর ভান করতে হবে কিন্তু মহিলারা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন।
সবুজ চীনের জায়গাটি শেষ হলে আবারও স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে যাবেন এভাবে সাঈর প্রথম চক্কর শেষ হবে। সাঈ করার সময় নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই, এ সময় নিজের পছন্দমত যে কোন দোয়া করা যায়।
মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে মোনাজাতের ন্যায় দুই হাত তুলে সাফা পাহাড়ের ন্যায় তিনবার দোয়াটি পড়বেন। দোয়া করা শেষ হলে আবারও মারওয়া থেকে সাফা পাহাড়ের দিকে হাটা শুরু করবেন, আগের ন্যায় সবুজ চিহ্নিত জায়গাটিতে পুরুষরা একটু জোরে হাটবেন সবুজ চিহ্নিত জায়গাটি শেষ হলে স্বাভাবিক ভাবে হেটে মারওয়া পাহাড়ে যাবেন। এভাবে সাঈর দ্বিতীয় চক্কর শেষ হবে।
একইভাবে মোট সাতবার চক্কর দিতে হবে এবং মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে সাঈর সপ্তম চক্করটি শেষ হবে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র সাফা পাহাড়ে প্রথমবার এবং মারওয়া পাহাড়ে প্রথমবার দাঁড়িয়ে দোয়া করতে হয়, কিন্তু শেষের ৫টি চক্করে সাফা বা মারওয়া পাহাড়ের দাঁড়িয়ে দোয়া করতে হবে না তবে সায়ী করার সময় নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন।
৪. মাথা মুন্ডনঃ
সাঈ পূর্ণ করে পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন বা মাথার চারদিকের চুল সমান পরিমানে ছেটে নিবেন, তবে মাথা কামানো বা মুণ্ডন করা উত্তম। না মাথার চারদিকে চুল সমান পরিমানে ছেঁটে নেবেন তবে মাথা মুন্ডন করা বা কামানো উত্তম। মনে রাখবেন, চুল ছোট করার ক্ষেত্রে মাথার যে কোন স্থান থেকে একটু করে কাটলে চলবে না বরং মাথার চারপাশ দিয়ে সমান পরিমাণ কাটতে হবে। মহিলারা সবগুলো চুল একত্র করে নিজে বা মাহ্রাম পুরুষ দিয়ে চুলের অগ্রভাগের এক ইঞ্ছি পরিমান কেটে নিবেন।
এভাবে ওমরাহ্ পূর্ণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ এবং ইহরাম কালের নিষিদ্ধ কাজ গুলো এখন হালাল হয়ে যাবে
ওমরার ফজিলতঃ
১। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ‘উমরার পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান। @সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৭৭৩, (হাদিসের মান: সহিহ হাদিস) ।
২. আমর ইবন দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেনঃ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরস্পর পালন (হজ্জ সমাপনের পর উমরা এবং উমরার পর হজ্জ) করবে, কেননা তা (এ দু’টি) অভাব অনটন ও পাপকে দূর করে দেয় যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে।
@সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩০, (হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ্ পালন করার তৌফিক দান করুন।